Bengal liberty

স্বাধীন সাংবাদিকতার ব্রত নিয়ে Bengal Liberty-র যাত্রা অব্যাহত।

Netaji

Netaji

নেতাজির চিন ফাইল প্রকাশ। মাও সেতুংয়ের লাল চিনে এশিয়ান মুক্তির স্বপ্ন দেখেছিলেন। সঙ্গী ছিলেন মত্থুরামালিঙ্গম থেবর (Netaji)

বিট্টু রায়চৌধুরী, সম্পাদক: ১৮ আগস্ট ১৯৪৫ তাইহকু বিমানবন্দর। সাজানো বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজি নিজের অস্তিত্ব পুড়িয়ে গায়েব করে দেওয়ার চেষ্টা চালালেন। সেনা হাসপাতালে সুভাষ তাঁর মৃত্যুর গপ্পো ফেঁদে পরবর্তী রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণ করতে যাত্রা শুরু করলেন। তারপর…

Netaji
Netaji

মত্থুরামালিঙ্গম থেবর চিনে গেলেন (Netaji)

১৯৪৯ সালের শেষের দিকের কথা। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মেজদা শরৎ বসু গোপন টেলিগ্রাম পাঠালেন ফরওয়ার্ড ব্লকের নেতা মত্থুরামালিঙ্গম থেবরকে। বার্তা পেতেই ৮ ডিসেম্বর মাদুরাই থেকে কলকাতার দিকে
রওনা দিলেন থেবর। এরপর ১১ মাস তাঁর কোনও খোঁজ মেলেনি। নেতাজির একনিষ্ঠ অনুগামী হিসাবে পরিচিত ছিলেন মত্থুরামালিঙ্গম থেবরকে। সেই কারণে, তাঁর পিছনে টিকটিকিও ছিল প্রচুর। কিন্তু, আচমকা গোপনে তিনি কোথায় গা-ঢাকা দিলেন, সেই তথ্য গুপ্তচর থেকে শুরু করে পার্টি কর্মী, কারও কাছেই ছিল না।

৪ এপ্রিল ১৯৫৬। ‘যুগান্তর’ পত্রিকায় প্রকাশিত একটা খবর নিয়ে দেশের রাজনীতিতে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গেল । মত্থুরামালিঙ্গম থেবর দাবি করেছেন, নেতাজি জীবিত। চিনে আছেন।

খবরটি ছিল এরম― ‘‘জান্তাজ বিধানসভার সদস্য ও নিখিল ভারত ফরওয়ার্ড ব্লকের সহ-সভাপতি শ্রীমুত্থুরামালিঙ্গম থেবর আজ এখানে বলেন যে, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু জীবিত আছেন এবং তিনি চীনের কোনও স্থানে অবস্থান করিতেছেন। শ্রী থেবর আরও বলেন যে, নেতাজীর কথিত মৃত্যুর পাঁচ বৎসর পর অর্থাৎ ১৯৫০ সালে তিনি নেতাজীর সহিত নয় মাস কাল চীনে বসবাস করিয়াছেন। তিনি বলেন, বর্তমান বৎসরের কেবলমাত্র ফেব্রুয়ারী মাসেই আমি পুনরায় তাঁহার সহিত সংযোগ স্থাপন করি এবং সেই সময় হইতে তাঁহার সহিত আমার যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু, রহিয়াছে।’’ (বানান অপরিবর্তিত)

শরৎ বসুর নির্দেশ মতো হিমালয়ের গিরিপথ ধরে থেবর পৌঁছলেন সিংকিয়াং প্রদেশে। সেই স্থানে বসে নেতাজি তখন ‘এশিয়ান লিবারেশন আর্মি’ তৈরি করে এশিয়া মহাদেশের মুক্তির পথ খুঁজছেন। প্রিয় নেতাকে দেখে অবাক হলেন থেবর। বিমান দুর্ঘটনায় সুভাষ বসুর মৃত্যু যে কেবল একটি ‘কাহিনি’ ছিল, সেটা থেবর জানতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, নেতাজি ফিরবেন। কিন্তু, সুভাষের দেখা যে শেষ পর্যন্ত চিনে মিলবে, তা ভাবতে পারেননি।

নেতাজির নির্দেশেই থেবর বিমান চালনার প্রশিক্ষণ নেন। প্রায় ৯ মাস মিলিটারি ট্রেনিং নিয়ে ফিরে আসনে ভারতে। চিনা ডুবজাহাজে চেপে প্রথমে কোচিন বন্দর থেকে ৭০ মাইল দূরে এসে পৌঁছন। তারপর নৌ-পথে সোজা সমুদ্রতটে। ১৯৫০-এর নভেম্বরে থেবর ঘনিষ্টদের জানান, নেতাজি জীবিত। দেশে ফিরে আসবেন। তবে, তার আগে তিনি এশিয়ান লিবারেশন আর্মি দ্বারা সমগ্র এশিয়া মহাদেশের মুক্তি নিশ্চিত করতে চাইছেন। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে নেতাজি তাঁর কাজ শুরু করে দেবেন।

১৯৫২ সাল। দেশে প্রথম সাধারণ নির্বাচন শুরু হবে। মাদ্রাজের রামনাদ জেলার এডির কোট্টাই থেকে ফরওয়ার্ড ব্লকের তরফে মুত্থুরামানুজম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তাঁর সমর্থনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মত্থুরামালিঙ্গম থেবর নেতাজির সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের বিষয়টা উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, ‘নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এই নির্বাচনের দিকে সজাগ দৃষ্টি রেখেছেন।’

১৯৫০, ২৫ নভেম্বর। স্থান, মাদুরাইয়ের তিলক স্কোয়ার। বড় জনসভার আয়োজন হয়েছে। বক্তা মত্থুরামালিঙ্গম থেবর। ইতিমধ্যে তিনি চিনে নেতাজির সঙ্গে সাক্ষাৎ সেরে এসেছেন। মিলিটারি ট্রেনিংও নেওয়া হয়ে গিয়েছে। দেশে ফিরে ফরওয়ার্ড ব্লকের কাজে নেমে পড়েছেন।

নির্বাচন প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখতে গিয়ে থেবর বললেন, ‘কমনওয়েলথ ব্যবস্থায় গড়া পার্লামেন্ট-গণতন্ত্রে নেতাজির অনুগামীরা বিশ্বাস রাখেন না। এই ব্যবস্থায় কখনওই সমাজতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা হতে পারে না। তাও আমরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। কারণ, নেতাজির বক্তব্য সরাসরি জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে নির্বাচনকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।’

মাদ্রাস থেকে প্রকাশিত পি.এম থেবরের লেখা ‘নেতাজি অ্যান্ড মর্ডান ইন্ডিয়া’ বইয়ের ১১৮ এবং ১২১ নম্বর পেজে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে মুত্থুরামালিঙ্গম থেবরের সঙ্গে নেতাজির সাক্ষাতের বিষয়টি।

 এশিয়ার মুক্তির স্বপ্ন এবং ‘এশিয়ান লিবারেশন আর্মি (Netaji)

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অক্ষশক্তির পরাজয়ের পর নেতাজি তাঁর মন্ত্রিসভার সহকর্মীদের নিয়ে প্রথমে সিঙ্গাপুরে চলে যান। সেখান থেকে নিরাপদে মানচুরিয়ায় দিকে এগিয়ে যান। ডেইরনে পৌঁছানোর পর স্তালিন তাঁকে স্বাগত জানিয়ে মস্কোয় আশ্রয় দেন। কয়েকদিন পর নেতাজি মস্কো থেকে আবার মানচুরিয়ায় ফিরে আসেন। উদ্দেশ্য একটাই, মাও সেতুংয়ের সঙ্গে মিলিত হয়ে ‘এশিয়ান লিবারেশন আর্মি’ গঠনের মাধ্যমে চিন, ভারত-সহ সমগ্র এশিয়াকে অ্যাংলো-আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের হাত থেকে মুক্ত করা।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ যে আগামীদিনে বিশ্বের ওপর ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলবে, তা আগে থেকেই আঁচ করতে পেরেছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। সেই কারণে বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে নেতাজি গান্ধিকে চিঠির লিখে বলছেন, ‘‘মিত্রপক্ষ যদি যুদ্ধে জয়লাভে সক্ষম হয়, আগামী দিনে ব্রিটেন নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হবে বিশ্বের এক নম্বর শক্তি। ব্রিটেন তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত হবে।’’ চিঠিতে আরও উল্লেখ আছে― ‘‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে আমি এটুকু বলতে পারি, ওয়াশিংটনের শাসকগোষ্ঠী এখন গোটা বিশ্বে প্রাধান্য বিস্তারের স্বপ্ন দেখছে। ওই শাসকগোষ্ঠী এবং তাদের সমর্থক বুদ্ধিজীবীরা প্রকাশ্যেই ‘মার্কিন শতকের’ কথা বলছেন। যার অর্থ হ’ল বর্তমান শতকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই গোটা দুনিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করবে। ওই শাসক গোষ্ঠীর মধ্যে এখনও লোক রয়েছেন, যাঁরা ইতিমধ্যে ব্রিটেনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৯তম রাজ্য বলে বর্ণনা করতে শুরু করেছেন।’’

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আগামী দিনের মাথা ব্যাথার কারণ হিসেবে বর্ণনা করার সূত্রেই নেতাজি মাওয়ের সঙ্গে কার্যত হাত মিলিয়ে ‘এশিয়ান লিবারেশন আর্মি’ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মাও বহুবার নেতাজির বীরত্ব এবং যুদ্ধকুশলতার প্রশংসা করেছেন।

১৯৪৯ সালে যখন কোরিয়ান যুদ্ধ শুরু হয়, তখন মাও নেতাজিকে উত্তর কোরিয়ার পক্ষে চীনা ভলান্টিয়ার কর্পসের সর্বাধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব নিতে অনুরোধ করেন। নেতাজির আগমনের পর উত্তর কোরিয়া বিস্ময়কর বিজয় অর্জন করে এবং আমেরিকা মুখ থুবড়ে পড়ে। এখানে মুত্থুরামালিঙ্গম থেবর-ও সুভাষের সহকারী হিসেবে যুদ্ধক্ষেত্রে অংশ নেন।

৫ বছর পর…
১৯৫৫-র ১৫ ডিসেম্বর নেতাজি থেবরকে বার্মা তথা বর্তমান মায়ানমারে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। থেভর সঙ্গে-সঙ্গে রওনা দিলেন শান প্রদেশে। সেখানে তাঁর নেতাজির সঙ্গে পুনরায় সাক্ষাৎ হয়। শান রাজার প্রাসাদে তাঁরা বেশ কিছুদিন ছিলেন। সেই সূত্রে মত্থুরামালিঙ্গম থেবর জানতে পারেন, এশিয়ান লিবারেশন আর্মি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তাদের হাতে নিউট্রন, কোবাল্ট, রেডিয়েশন বোমার মতো অত্যাধুনিক হাতিয়ার বর্তমান। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা ঘটলেই এশীয় মুক্তি বাহিনী ভারতে ঢুকে ‘অথরিটারিয়ান সোশ্যালিজম’ প্রতিষ্ঠা করবে।

বিমান দুর্ঘটনার কাহিনি নির্মাণ করেছিলেন স্বয়ং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। কিন্তু, সত্যিটা পরবর্তীতে রাজনৈতিক কারণে প্রকাশ্যে আনতে চায়নি কংগ্রেস। এমনকি তাইওয়ান রিপোর্ট সামনে আসতে দিচ্ছে না বিজেপিও। কিন্তু নেতাজি জীবিত ছিলেন। স্ট্যালিনের সাহায্যে পৌঁছে গিয়েছিলেন মাও সেতুংয়ের লাল চিনে। তারপর কি হ’ল? সব ফাইল প্রকাশ্যে না-এলে বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই রহস্য কোনও দিন উন্মোচিত হবে না।