Bengal liberty

স্বাধীন সাংবাদিকতার ব্রত নিয়ে Bengal Liberty-র যাত্রা অব্যাহত।

politics

politics

বিজেপি বিরোধীতায় গতি হারিয়েছে বামেরা (politics)

সুনির্মল বোস,Bengal Liberty: ইতিহাসে এবং পৃথিবীতে যতবারই রাষ্ট্র এবং ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত সরকার মানুষের ওপর বিভিন্ন প্রকরণের নিপীড়ন নামিয়েছে ততবারই মানুষ বিদ্রোহ করেছে। নতুন নতুন সমাহারে, নতুন নতুন প্রকরণে। সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী লড়াইয়ে জাতীয়তাবাদ এসেছিল। আবার জাতীয়তাবাদ যখন উগ্র “অপর ” ঘৃণা ছড়িয়েছে তখন অপর দেশ তো বটেই সেই দেশের মানুষও পথে নেমেছে। কারণ যুদ্ধ ও ঘৃনায় নিজের দেশের মানুষের অপূরণীয় ক্ষতি হয়। যুদ্ধ একটা সার্বজনীন নিষ্পেষণ। যাতে সুবিধাভোগী শোষক শ্রেষ্ঠী এবং ক্ষমতার অলিন্দে থাকা হাতে গোনা পুঁজিপতি ও জনগণের পকেট কাটা চোর ছাড়া কারও কোনও উপকার হয় না। সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী গণসংগ্রাম এবং গণঅভ্যূথান খুব দ্রুত অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পরে। এবং, সমগ্র পৃথিবীতে তার প্রভাব পরে। অচিরেই সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী লড়াই উৎপাদিকা শ্রেণীগুলোর মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। এখানেই সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম শ্রেণী সংগ্রামের সঙ্গে মিলে মিশে যায়। সময়ের যাত্রাপথে ক্ষমতার বিবর্তনে ভারসাম্য বদলের লড়াই। কখনও তা খুব দ্রুত হয়, বেশির ভাগ সময়ে অবশ্য লড়াইটা দীর্ঘস্থায়ী জনযুদ্ধ চলে। আর এই দীর্ঘস্থায়িত্বকে শোষক, শাসকরা বেমক্কা ভয় পায়। তাদের ক্ষমতায় টিকিয়ে থাকার একমাত্র পদ্ধতি, প্রণালী এবং প্রকরণ বিভিন্ন ঢপ দিয়ে মানুষকে স্থিতাবস্থার মধ্যে রেখে নিজেদের মুনাফাকে শুষে নিজেদের পকেটস্থ করা। শাসক কখনও এমন কিছুই করে না যাতে দেশের , অপর দেশের বা পৃথিবীতে কোনও উৎপাদিকা ও মেহনতি জনগোষ্ঠীর কোনও উপকার হতে পারে না। কারণ সেরকমটা হলে পুঁজি লাভের হার কমে যাবে। এবং, সেই শোষণ দীর্ঘায়িত হবে। সাম্রাজ্যবাদ দেশে দেশে স্তাবক মুৎসুদ্দি গড়ে তোলে। যারা নিজেদের দেশে ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করে। বিভিন্ন রূপে এই ফ্যাসিবাদ দেশে দেশে তাদের বাবুদের অর্থাৎ বিশ্বপুঁজির শাসনপদ্ধতি এবং সম্পদ শোষণের পদ্ধতি ও প্রকরণকে কায়েম রাখে। বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদ যখন বিশ্বপুঁজিকে নিয়ন্ত্রণ করে, তখন ফ্যাসিবাদ সবসময়েই সাম্রাজ্যবাদের দালাল। ফ্যাসিবাদ বিরোধী সংগ্রামকে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রাম থেকে বিচ্ছিন্ন করা যায় না। প্রেক্ষিত যখন যে শত্রু সামনে এসে মুখোশ খুলে দাঁড়ায়, তার সঙ্গে জনমানুষের দ্বন্দ্বই প্রধান দ্বন্দ্ব হয়ে ওঠে। কারণ এই দ্বন্দ্বকে সমাধান না করতে পারলে বা প্রধান শত্রুকে আক্রমণের বর্ষামুখ করতে না পারলে জনগণের হাতে ক্ষমতা আসে না। জনগণের সম্পদ জনগণের কর্তৃত্বে আসবে না। সামনে সাম্রাজ্যবাদ খোলাখুলি ভাবে দাঁড়ালে সেই দ্বন্দ্বকে পিছনে ঠেলে দিয়ে ফ্যাসিবাদকে প্রধান দ্বন্দ্ব বলে চালানো সাম্রাজ্যবাদী প্রধান শত্রুকে আড়াল করে। তাদের বেঁচে থাকার ইজারা দেওয়া হয় অর্থাৎ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতাকে সামনে উন্মোচন না করে, পিছনে থাকা (যদি সেরকমটাও হয়)ফ্যাসিবাদ বা বিপরীত শিবিরের ফ্যাসিবাদী শক্তিকে নজরের বা আক্রমণে প্রাধান্য দেওয়া সাম্রাজ্যবাদকে প্রতিষ্ঠাই করা। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে আমরা দলছুট বামপন্থী ব্যাক্তিত্বদের কাছ থেকে এমন নসিহত পেয়েছিলাম যা ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের লাভ আধুরা রয়ে গেল।

আবার দেশে যখন ফ্যাসিবাদ একেবারে সামনে থেকে ক্ষমতা চালায় তখন তাকে প্রধান শত্রু। এবং তার সঙ্গে দ্বন্দ্ব কে প্রধান না করে কিছু খন্ড বৈষয়িক দাবিদাওয়ার লড়াই কে প্রাধান্য দেওয়ার অর্থ দেশে ফ্যাসিবাদী সরকার কেই কায়েম রাখার কাজ করা।সেটা ‘মেকি বিরোধিতার’ আড়ালে ঐক্যবদ্ধ ভোট কাটার নামেই হোক। আর আন্দোলনে সক্রিয় ভাবে সংযুক্ত না হবার মধ্যে দিয়েই হোক না কেন।

 

politics
politics

আজ আমাদের দেশে সিপিআইম কেন্দ্রের ফ্যাসিবাদী সরকারকে খোলাখুলি ফ্যাসিবাদী বলতেই পারছে না , সম্পূর্ণ ভাবে লড়াই বা all-out করবে কি? ফ্যাসিবাদ যেরকম নিজে দাঁড়াতে পারে না , আবার সে সামনে যে দাঁড়িয়ে থাকে তা সাম্রাজ্যবাদের মদত পুষ্ট হয়েই। কারণ পুঁজিটা সেই সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর কোষাগারেই নিয়ে যেতে হবে ফ্যাসিবাদী সরকারের। দল ও ক্রোনি বা সরকারের দোসর পুঁজিপতিদের। এটা তাদের ওপর ন্যস্ত দায়িত্ব। দায়িত্ত্ব দেওয়া আছে সাম্রাজ্যবাদের সামরিক নিরাপত্তা প্রদানের মাধ্যমে। মানুষ তাড়িয়ে দিলে হাসিনার মতো কোনও না কোনও দেশে তাদের সুরক্ষা দেওয়া হবে। কিন্তু একেবারে দরজার গোড়ায় কে দাঁড়িয়ে আছে তার ওপর নির্ভর করে কে প্রধান শক্তি আর কোনটা প্রধান দ্বন্দ্ব। সাম্রাজ্যবাদ আর ফ্যাসিবাদ এর মধ্যে অতিনিয়ন্ত্রন বিষয়টা থাকলেও , কে সামরিক বাহিনী নিয়ে মানুষের সামনে যুদ্ধের সাজে, যুদ্ধের প্রস্তুতিতে দাঁড়িয়ে আছে সেটাই সেই মুহূর্তের লড়াইয়ের মূল লক্ষ্যবস্তু হতে হবে। কোনওরকম প্রতিস্থাপন বা উল্টে দেওয়াই সাম্রাজ্যবাদ তথা ফ্যাসিবাদের দালালি।

যারা মনে করে ফ্যাসিবাদ চিরদিনের জন্যে প্রেক্ষিতবিহীন ভাবে প্রধান শত্রু বা উল্টোটা।একদিকে যেমন মানুষের স্বার্থে মানুষের আশু আগুন লড়াইয়ের প্রতি বিস্বাসঘাতকতা করে থাকে। আবার অন্য দিকে অচিরেই জনবিচ্ছিন্ন হয়ে শেষে ব্যক্তি দিগ্গজ ও ব্যক্তি বিপ্লবী হিসেবে সম্মিলিত জনস্বার্থের ওপরে ব্যক্তিবাদ কে প্রতিষ্ঠা করে।

অন্য ভূখণ্ড বা দেশের প্রধান দ্বন্দ্ব এবং প্রধান লড়াইকে আমাদের দেশেও প্রধান দেখানো মানুষের সঙ্গে একটা রাজনৈতিক বিস্বাসঘাতকতা। আমাদের লড়াইটা আমাদের দেশের সামনের শত্রুর সঙ্গে সামনাসামনিই লড়তে হবে সংহতি আন্দোলন দেশের মধ্যেকার প্রধান লড়াই হতে পারে না। আন্তর্জাতিক ইসু দেশের মধ্যেকার প্রধান ইসু হয় না। তাই গান্ধী বলেছিলেন ভারতের সৈন্যরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিশ্বফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়তে পারে এই শর্তেই যে তারা স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক এবং স্বাধীন সৈন্য। নিঃশর্ত দাস সৈন্য হিসেবে নয়। ৭৫ সালে জরুরুই অবস্থার সময়ে স্বৈরাচারী ইন্দিরা সরকারকে সিপিআই সমর্থন করে বিপ্লবীদের হত্যার সহায় করেছিল সোভিয়েত সমর্থনের বাহানায়। পার্টিটা এ দেশে গলে গেল। তাদের বড়ো বড়ো মাথা সত্ত্বেও। আবার সোভিয়েতের আফগানিস্তান আক্রমণের সময়ে যারা সোভিয়েত আগ্রাসনের পাশে দাঁড়িয়েছিল। তারা তো মাথা কোনোদিন তুলতে পারলো না এমনকি সোভিয়েত দেশটাই আর পৃথিবীতে রইলো না। যারা ইসলামোফোবিয়ার মৌতাতে মুসলমানদের সবাইকে এবং সেই দেশগুলোকে সন্ত্রাসবাদী বলে সেই দেশগুলোর ওপরে মার্কিন আক্রমণে উৎফুল্লিত হল তারা দেখল সেই তালিবানরাই মার্কিন অস্ত্রের ওপরে ভরসা করে সেই মার্কিনদেরই দেশ থেকে খেদিয়ে দিল। dialectics এর সূত্র বৈজ্ঞানিক, উল্টে এখনো দেওয়া যায় নি।

আমাদের দেশে এখন ক্ষমতায় ফ্যাসিবাদী শক্তি ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত তাই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক জনগণের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামী এখন শ্রেণীসংগ্রামের নির্যাস। কারণ এই লড়াইয়ের জেতা হারার ওপর নির্ভর করবে উৎপাদিকা শ্রেণীগুলো ক্ষমতার আস্বাদ পাবে কিনা। তবে এই ফ্যাসিবাদ সাম্রাজ্যবাদের মুৎসুদ্দি দালাল যারা সাম্রাজ্যবাদী পুঁজির বৃদ্ধির কাজ করছে ভারতের উদ্বৃত্ত সম্পদ কে অর্থে রূপান্তরিত করে সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর ব্যাংকগুলোতে গচ্ছিত রাখে , সুদের লাভ ওই দেশগুলো ব্যবহার করে – সেটা ভুলে গেলে চলবে না। আজকের ফ্যাসিবাদ সব প্রেক্ষিতেই সাম্রাজ্যবাদের মনসবদার, তা সত্ত্বেও প্রধান দ্বন্দ্বটা ফ্যাসিবাদ এর সঙ্গে ভারতের মানুষের দ্বন্দ্ব। সেই লড়াইটা সেই নিয়মেই করতে হবে , সেটাই ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী অক্ষ শক্তিকে সবচেয়ে বেশি আঘাত করবে। এই মুহূর্তের সমস্ত জনগণের ঐক্যই উৎপাদিকা শক্তির লড়াইকে জোরদার করবে। কখনো শ্রেণী সংগ্রাম শ্রেণী পৃথকীকরণের মধ্যে দিয়ে প্রতিভাত হয়, কখনও শ্রেণী নির্বিশেষে ঐক্যের মধ্যে দিয়ে প্রকাশিত হয়।

(মতামত ব্যক্তি)