Bengal liberty

স্বাধীন সাংবাদিকতার ব্রত নিয়ে Bengal Liberty-র যাত্রা অব্যাহত।

history of rohingya

history of rohingya

রোহিঙ্গার ইতিহাস (history of rohingya)

বিট্টু রায়চৌধুরী ,Bengal liberty: ভারতে রোহিঙ্গা সমস্যা ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ১৬ সেপ্টেম্বর শিলচড়ে ১১ জন রোহিঙ্গাকে গ্রেফতার করেছে অসম প্রশাসন। দেশের নানা প্রান্তে এই সমস্যা আরও মাথাচারা দিয়ে উঠছে। শুধুমাত্র বাংলাদেশের পরিসংখ্যানের দিকে যদি আমরা নজর দিই, তাহলে UNHCR-এর তথ্য মোতাবেক আমরা দেখতে পাচ্ছি— মায়ানমারের রাখাইনে চলা নিপীড়ন এবং সংঘাতের কারণে ২০২৪ সালে ১৫০,০০০ নতুন শরণার্থীর আগমন ঘটেছে কক্সবাজারে। প্রথম দিকে, অর্থাৎ— রোহিঙ্গা সংকটের সূচনা পর্বে কক্সবাজারে ১০ লক্ষ শরণার্থী এসে বসবাস শুরু করেন। সেই সংখ্যাটা গত কয়েক বছরে প্রজনেনে কারণে ১৩ লক্ষতে গিয়ে পোঁছেছে বলে জানাচ্ছে বিভিন্ন সংস্থা। তার সঙ্গে যুক্ত হ’ল আরও দেড় লক্ষ। ফলে, শুধুমাত্র বাংলাদেশেই এই মুহূর্তে রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৪ লক্ষ ৫০ হাজার।

মায়ানমারে গৃহযুদ্ধের কারণে পরিস্থিতি এখনও উত্তপ্ত। এই অবস্থায় চলতি বছরের ৯-১০ মে সমুদ্র পথে ৪২৭ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালানোর চেষ্টা করছিলেন। সেই সময় দু’টি নৌকা ডুবে যায়। ঘটনার কয়েকদিন পর আলজাজিরা একটি খবর প্রকাশ করে। যেখানে সংবাদমাধ্যমটি স্পষ্ট জানায়, এই নৌকাডুবির দুর্ঘটনায় ৪২৭ জন নিখোঁজ হতে পারেন। পরবর্তীতে জানা যায়, একটি নৌকায় ২৬৭ জন ছিলেন, যাঁদের মধ্যে মাত্র ৬৬ জনকে বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। আরেকটিতে ছিলেন ২৪৭ জন। যার মধ্যে ২১ জন প্রাণ ফিরে পান। চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত ঘটে যাওয়া ভয়ঙ্কর ঘটনাগুলোর মধ্যে এটি একটি।

২০২৫-এর ২৮ আগস্ট Human Rights Watch তাদের ওয়েবে ভারতে বসবাসকারী রোহিঙ্গা সংক্রান্ত কিছু পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে। সেখানে দাবি করা হচ্ছে, আনুমানিক ৪০ হাজার রোহিঙ্গা এই মুহূর্তে ভারতে বসবাস করছে। যার মধ্যে UNHCR-এর রেজিস্ট্রেন প্রাপ্ত শরণার্থীর সংখ্যা ২০ হাজার।

গত ৮ মে, ২০২৫। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জীবনযাপন পরিস্থিতি এবং বিতাড়ন সম্পর্কিত এক মামলায় ভারত সরকার সুপ্রিম কোর্টকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয় যে, তারা UNHCR কর্তৃক প্রদত্ত শরণার্থী কার্ডকে স্বীকৃতি দেয় না। রোহিঙ্গাদের শরণার্থী হিসেবেও মেনে নেয় না। কারণ ভারত ১৯৫১ সালে জাতিসংঘের শরণার্থী কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ নয়। তাই ভারতের পক্ষ থেকে কোনও শরণার্থীদেরকে সুরক্ষা প্রদান করা হয় না।

অবশ্য, এই মর্মে রাজনৈতিক নানা সংগঠনের পাল্টা বক্তব্য, পড়শি দেশ থেকে ধর্মীয় কারণে ভারতে আগত হিন্দু-সহ অন্যান্য অ-মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষদের CAA-এর মাধ্যমে নাগরিকত্ব প্রদান করা হচ্ছে। আর সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে দেশের সরকার বলছে, ১৯৫১ সালে জাতিসংঘের শরণার্থী কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ নয় ভারত। সেই কারণে, শরণার্থীদেরকে সুরক্ষা প্রদান করা হয় না।

অবশ্য, জাতীয় নির্বাচন কমিশনের তরফে দেওয়া তথ্য মোতাবেক কয়েক বছরের মধ্যে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকার জনবিন্যাস অ্যাবনর্মালভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে। একইসঙ্গে, জনসখ্যা বৃদ্ধি হচ্ছে চোখে পড়ার মতো। ফলে, মার্কিন সংস্থাগুলোর তৈরি করে দেওয়া রিপোর্ট যে বেদবাক্য হবে, সেটা মনে করার কোনও কারণ নেই। এবং, পশ্চিমবঙ্গে SIR প্রক্রিয়া শুরু হলে, বোঝা সম্ভব হবে, এভাবে জনবিন্যাসের পরিবর্তন এবং জন্যসংখ্যা বৃদ্ধির মূল কারণ কি।

বর্তমানে সিরিয়া, সোমালিয়া, সুদান-সহ বিশ্বের নানা দেশে উদ্বাস্তু সমস্যা ভয়ঙ্করভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে, সাম্প্রতিককালে উদ্বাস্তু সমস্যাগুলোর মধ্যে তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছে ‘রোহিঙ্গা রিফিউজি ক্রাইসিস’। বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদকে সামনে রেখে একটা মুসলমান সম্প্রদায়ের ওপর নির্মম অত্যাচার এবং দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা আন্তর্জাতিক মহলে নিন্দার ঝড় তুলে দিয়েছিল। আজ আনুমানিক ১৯-২০ লক্ষ রোহিঙ্গা মুসলিম ভারত, বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া-সহ বিশ্বের নানা প্রান্তে বসবাস করছেন।

history of rohingya
history of rohingya

যে কারণে নিজেদের দেশ থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গারা (history of rohingya)

সমস্যার সূত্রপাত অনেক আগেই। মায়ানমার কোনও দিনও পিছিয়ে পড়া রোহিঙ্গা মুসলমানদের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। রাষ্ট্র সবসময় মনে করে যে, এঁরা বেআইনি অনুপ্রবেশকারী। যাঁরা বেশ ক’এক দশক ধরে মায়ানমারে জোর করে বসবাস করছেন।

সময়টা ১৯৮২ সাল। ওই বছর ‛1982 Burmese Citizenship Law’ নামে একটি আইন সামনে আসে। এই আইন মোতাবেক, জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায় তখনই নাগরিকত্ব পাবেন, যখন তাঁরা প্রমাণ করতে পারবেন যে, ১৮২৩ সালের আগে তাঁদের পূর্বপুরুষ মায়ানমারে এসে বসবাস শুরু করে ছিলেন। কাগজ দেখিয়ে প্রমাণ করতে হবে! যদিও গবেষকরা দাবি করছেন, আরাকানের সময় থেকেই রোহিঙ্গা গোষ্ঠী মায়ানমারে বসতি স্থাপন করে ফেলেছিলেন।

এ তো গেল আইনের কথা। এ’বার সামাজিক নিয়মের দিকে একটু নজর দেওয়া যাক। রাখাইন প্রদেশে মূলত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বসবাস। এই অঞ্চল সম্পূর্ণভাবে অনুন্নত। শিক্ষা, চাকরি একদমই নেই। খাদ্যাভাব। নাৎসি জার্মানি ইহুদিদের কোণঠাসা করতে ১৯৩৫ সালে ‘নুয়েমবার্গ আইন’ চালু করেছিল। যেখানে সাফ বলা হয়েছিল, জার্মান রক্ত ছাড়া কাউকে জার্মানি’তে জায়গা দেওয়া হবে না। এ’ছাড়া জার্মান বাড়িতে কোনও ইহুদি কাজ করতে পারবেন না। উভয়ের মধ্যে কোনও বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করা যাবে না। ঠিক একইভাবে মায়ানমার’ও রোহিঙ্গাদের পরিবার পরিকল্পনার ক্ষেত্রে সরকারি অনুমতি বাধ্যতামূলক করে দেয়। একজন রোহিঙ্গা দেশের সব প্রান্তে যাতায়াত করতে পারবেন না। এর জেরে অশিক্ষা, বেকারত্ব এবং ক্ষোভ গ্রাস করে ফেলে গোটা রাখাইন প্রদেশকে। এই আবহে ২০১২ সালে ক’এক জন রোহিঙ্গা যুবক এক বৌদ্ধ তরুণীকে ধর্ষণ করে খুন করে। ঘটনার পর বৌদ্ধ জাতয়তাবাদীদের মধ্যে রোহিঙ্গা নিয়ে ক্ষোভ আরও তীব্র আকার ধারণ করে। এমনিতেই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব অব্যাহত ছিল। ঘটনার পরপর-ই পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

history of rohingya
history of rohingya

নেপোথ্যে উগ্র বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী কী? (history of rohingya)

বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী শক্তির একটা অংশ বন্দুক হাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে রোহিঙ্গা উচ্ছেদ মিশনে। সংঘর্ষে ২৮০ জন সাধারণ রোহিঙ্গা মারা যান। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় বাড়ি।

সেমিটিক বিরোধী ‘৯৬৯’ আন্দোলনকে সামনে রেখে অহিংস বৌদ্ধ সন্ন্যাসী এবং ভিক্ষুকদের হটাৎ সহিংস হওয়ার ঘটনা বুদ্ধের শান্তির দর্শনকে বড় প্রশ্ন মুখে এনে দাঁড় করিয়ে দেয়। টাইম ম্যাগাজিনে ‘The Face of Buddhist Terror’ সংখ্যায় রোহিঙ্গা নিধনের ঘটনার জন্য যে ব্যক্তিকে দায়ী করা হ’ল, তিনি আশিন ওয়েরাথু। যাকে ‘বর্মী বিন লাদেন’ হিসাবেও চিহ্নিত করা হয়।

রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন বৃদ্ধির সঙ্গে-সঙ্গে রোহিঙ্গারা মায়ানমার ছাড়তে শুরু করে। এরইমধ্যে ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে মায়ানমারের সীমান্তে পুলিশের উপর হামলার চালায় ‘আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি’। ঘটনাটি বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীদের মধ্যে ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে দেয়। এরপরই শুরু হয় নির্বিচারে রোহিঙ্গা নিধন। প্রতিশোধ হিসাবে ঘরে-ঘরে ঢুকে চলে গণহত্যা, ধর্ষণ। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় রাখাইনের একেকটি গ্রাম। তারপর গোটা বিশ্ব দেখল রোহিঙ্গা রিফিউজি সংকট।

পশ্চিমবঙ্গের ওপর প্রভাব (history of rohingya)

আজ রোহিঙ্গা সংকটের জেরে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে বিশাল প্রভাব পড়ছে। রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপির তরফে অভিযোগ, এই শরণার্থীদের ভোটব্যাংক হিসাবে কাজে লাগাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস