Bengal liberty

স্বাধীন সাংবাদিকতার ব্রত নিয়ে Bengal Liberty-র যাত্রা অব্যাহত।

Bibhu Ranjan Sarkar

Bibhu Ranjan Sarkar

‘সত্য লিখে বাঁচা সহজ নয়'( Bibhu Ranjan Sarkar )

ঊষান ঘোষ,Bengal Liberty:  ‘সত্য লিখতে গেলে কখনো কখনো
ব্যক্তিগত স্বাচ্ছন্দ্য হারাতে হয়’

‘সত্য প্রকাশ করা মানে সাহসের
সঙ্গে ঝুঁকি নেবার নাম ‘

শেষ চিঠি এক সাংবাদিকের (Bibhu Ranjan Sarkar)

দিন কয়েক আগে ওপার বাংলার মুন্সীগঞ্জের মেঘনা নদী থেকে তাঁর ভাসমান দেহ উদ্ধার হয়। দেহে ছিল না কোনও আঘাতের চিহ্ন। তেমনটাই জানিয়েছিলেন ওপার বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিকরা।

দেহটি এক প্রবীণ সাংবাদিকের। নাম বিভুরঞ্জন সরকার। ওপার বাংলার সংবাদ জগৎ কিংবা সাহিত্য জগতের খোঁজখবর যাঁরা রাখেন, তাঁদের কাছে পরিচিত। এপার বাংলায় পরিচিত অনেকাংশেই কম।

ময়নাতদন্তে দেহে আঘাতের চিহ্ন না থাকায় অনেকে বলছেন, আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছিলেন পাঁচ দশক সাংবাদিকতাকে আঁকড়ে বেঁচে থাকা মানুষটি।

২১ অগাস্ট শেষবারের মতো বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসার আগে বাংলাদেশের এক সংবাদমাধ্যমকে একটি লেখা ই-মেল করেছিলেন ৭১ বছরের পৃথিবীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা মানুষটি। সেখানে বলেছিলেন জীবনের শেষ লেখা হিসাবে ছাপতে পারেন।

Bibhu Ranjan Sarkar
Bibhu Ranjan Sarkar

 

বিভুরঞ্জন সরকারের সেই লেখার কয়েকটি অংশ (Bibhu Ranjan Sarkar)

‘সাংবাদিকতার সঙ্গে আমার সম্পর্ক পাঁচ দশকের বেশি সময়ের। দেশের নানা পরিবর্তন, আন্দোলন, গণআন্দোলন এবং রাজনৈতিক উত্থান পতন প্রত্যক্ষ করেছি। এই দীর্ঘ সময় আমি লিখেছি সত্যের পক্ষে, মানুষের পক্ষে, দেশের পক্ষে। কিন্তু আজ, যখন নিজের জীবনকে দেখি, অনুভব করি – সত্য লিখে বাঁচা সহজ নয়।’

‘আমার পেশা আমাকে শিখিয়েছে – সত্য প্রকাশ করা মানে সাহসের সঙ্গে ঝুঁকি নেবার নাম। সত্য প্রকাশ করতে গেলে জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলা প্রয়োজন হয়। দীর্ঘ পাঁচ দশকের অভিজ্ঞতা বলছে, সত্য লিখতে হলে কখনো কখনো ব্যক্তিগত স্বাচ্ছন্দ্য হারাতে হয়। আমি তেমন স্বাচ্ছন্দ্য চাইনি কখনো। তবে সারাজীবন হাত পেতে চলতে হবে এটাও চাইনি।’

‘সাংবাদিকতার নৈতিক সততা আমাকে ব্যক্তিগত সুখভোগের জন্য তাড়িত করেনি। একটাই তাড়না – দায়িত্ববোধ। আমি জ্ঞানত কখনো দায়িত্ব পালনে অবহেলা করিনি। নিজের কাজে ফাঁকি দেইনি। খুব সাহসী মানুষ হয়তো আমি নই, কিন্তু চোখ রাঙিয়ে কেউ আমাকে দিয়ে কিছু লেখাতে পারেনি।’

‘আমার জীবনে কোনো সাফল্যের গল্প নেই। সাংবাদিক হিসেবেও এ-ডাল ও-ডাল করে কোনো শক্ত ডাল ধরতে পারিনি। আমার কোথাও না কোথাও বড় ঘাটতি আছে। এই ঘাটতি আর কাটিয়ে ওঠা হলো না। দুঃখই হোক আমার জীবনের শেষ সঙ্গী। আর পৃথিবীর সকল প্রাণী সুখী হোক।’

বাংলাদেশের মহম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের রোষানলেই বিভুরঞ্জন সরকারের মৃত্যুর কারণ, তেমনই বলছেন অনেকে। তা হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। গত এক বছরে বাংলাদেশে গণতন্ত্র, স্বাধীনতা এই শব্দ গুলো কেমন যেন বেমানান হয়ে পড়েছে। আর তাই সেখানে সাংবাদিক খবর লিখলে তাঁকে হুমকি দেওয়া হবে। ভয় দেখানো হবে। এটা কি খুব অস্বাভাবিক? অপ্রত্যাশিত?

গত কয়েক দশকে বাংলাদেশে গণতন্ত্র শব্দটি বারবারে ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। তা বোধহয় অস্বীকার করার খুব বেশি জায়গা নেই।

তাঁর শেষ লেখায় সাংবাদিকতার নানা দিককে উন্মোচিত করেছেন বিভুরঞ্জন সরকার।

সেই চিত্র কি শুধুমাত্র ওপার বাংলার? না কি বিশ্বের নানা প্রান্তের? নানা দেশের?

২০২৫ সালের রিপোটার্স উইদাউট বডার্স প্রেস ফ্রিডমের সূচকে ভারতের স্থান ১৫১। তবে ২০২৪ সালের তুলনায় কিছুটা ভাল। ওই বছর ১৫৯ তম স্থানে ছিল ভারতবর্ষ।

বিভুরঞ্জন সরকার তাঁর জীবনের শেষ লেখায় যা উল্লেখ করলেন তা কি শুধুমাত্র আক্ষেপের কথা?

খোলা চিঠিতে কি লুকিয়ে রয়েছে নানা বাস্তব সত্য?

বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা কি ক্রমেই নিজের পথ হারাচ্ছে?

বিভুরঞ্জন সরকারের অনুযোগ, খেদ কিংবা আক্ষেপের দায় কার? সমাজের? রাষ্ট্রের? প্রয়োজন সংস্কারের?

গণতন্ত্রকে শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করাতে গেলে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার জরুরি। তা নিয়ে নানা চর্চা, আলাপ আলোচনা, কাটাছেঁড়া হয়। কিন্তু রূপায়ণ? বাস্তবায়ন?

সুস্থ, সমৃদ্ধ, শক্তিশালী গণতন্ত্রে
সংবাদমাধ্যমের জোরাল কন্ঠের প্রয়োজন।
তা কি অস্বীকার করা যায়?